প্রকাশিত: Sat, Jun 8, 2024 1:07 PM
আপডেট: Sun, Jun 22, 2025 10:13 PM

[১]মাছ ধরতে আধার দিতে হয়: কালো টাকা সাদা করার সুযোগ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী [২]মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ বড়ে চ্যালেঞ্জ

সালেহ্ বিপ্লব: [৩] ঐতিহাসিক ৭ জুন উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

[৪.১] নানা মহল থেকে আসা বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা প্রশ্ন আসছে, কালো টাকা নিয়ে। কালো টাকা নিয়ে আমি শুনি, অনেকে বলে কালো টাকা? তাহলে আর কেউ ট্যাক্স দেবে না।

[৪.২] তিনি বলেন, ঘটনা কিন্তু এটা না, এটা শুধু কালো টাকা না। জিনিসের দাম বেড়েছে। এখন এক কাঠা জমি যার, সেই কোটিপতি। কিন্তু সরকারি যে হিসেব, সেই হিসেবে কেউ বেচে না, বেশি দামে বেচে বা কিছু টাকা উদ্বৃত্ত হয়। এই টাকাটা তারা গুঁজে রাখে। গুঁজে যাতে না রাখে, সামান্য একটা কিছু দিয়ে যাতে সেই টাকাটা আসল পথে আসুক, জায়গা মত আসুক। তার পরে তো ট্যাক্স দিতেই হবে।

[৪.৩] প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বলি, আধার ছাড়া তো মাছ আসবে না। সেই রকম একটা ব্যবস্থা, এটা আসলে আগেও হয়েছে। সেই তত্ত্বাবধায়ক আমলেই শুরু করেছিলো, আর পরেও প্রত্যেক সরকারই করে।

[৪.৪] তিনি বলেন, সেই সুযোগটা আমরাও দিয়েছি। অল্প ট্যাক্স দিয়ে সেই টাকাটা তোমরা ব্যাংকে নিয়ে আসো, সেই ব্যবস্থাটাই হয়েছে। এটা নিয়ে নানা জনের নানা কথা। কিন্তু তারপরেও যেগুলো মানুষের প্রয়োজন সেই ক্ষেত্রে ট্যাক্স কমিয়ে দিয়েছি।

[৫.১] প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ রাখাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে বর্ণনা করে সরকারপ্রধান বলেন, বিশেষ করে খাদ্যমূল্য; সেখানে উৎপাদন এবং সরবরাহ বৃদ্ধি করতে হবে। বৃষ্টির কারণে যেমন আলুর বীজ নষ্ট হয়ে গেছে, তো এই রকম অনেক কিছু আছে। আমরা এখনও উৎপাদনমুখী হলে খাদ্যে কোনো দিন অভাব হবে না।

[৫.২] মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে প্রান্তিক মানুষকে সুরক্ষা দেওয়ার কথাও তুলে ধরেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, নিম্ন আয়ের মানুষ যারা, এই সীমিত আয়ের মানুষ যারা, তাদের জন্য আমরা পারিবারিক কার্ড করে দিয়েছি। যারা একেবারে হতদরিদ্র তাদের তো একেবারে বিনা পয়সায় খাবার দিচ্ছি। আর সামাজিক নিরাপত্তাও বিনা পয়সায় দিয়ে যাচ্ছি।

[৫.৩] প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের আর্থিক স্বচ্ছলতা বেড়েছে, খাদ্য গ্রহণের পরিমাণও বেড়েছে। এখন আর দিনের পর দিন না খেয়ে থাকতে হয় না। কমপক্ষে দুই বেলা খাবার তো পাচ্ছে মানুষ। সেখানে গ্রহণটাও বেড়েছে চাহিদাটাও বেড়েছে, আমরা সাথে সাথে উৎপাদনও বাড়িয়েছি। 

[৫.৪] মূল্যস্ফীতির কারণ হিসেবে করোনাভাইরাস মহামারী ও ইউক্রেন যুদ্ধকেও দায়ী করেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, আমরা এগিয়ে যাচ্ছিলাম। কোভিড অতিমারীর ফলে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা হয়েছে, আমরাও সেই মন্দায় পড়ে গেলাম। সারা বিশ্বে প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে গেলো। এরপর আসলো ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ, এরপর স্যাংশন-পাল্টা স্যাংশন। স্যাংশনের ফলে প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।

[৬.১] প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব পরিস্থিতি মাথায় রেখে পরিকল্পনা নিয়ে চলতে হবে। আমাদের দেশে যা হচ্ছে, একটা গোষ্ঠীর কিছু ভালো লাগে না। তাদের ভালো না লাগাই থাক, কান দেওয়ার দরকার নাই।

[৬.২] বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে আসার কারণে যে চাপ ও সমালোচনা, সেটি নিয়েও কথা বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমাদের মানুষকে খাওয়াতে হবে আগে। আমাদের রিজার্ভ কত আছে না আছে, সেটার চেয়ে বেশি দরকার আমার দেশের মানুষের চাহিদাটা পূরণ করা। সে দিকে লক্ষ্য রেখে আমরা পানির মত টাকা খরচ করেছি।

[৭.১] শেখ হাসিনা বলেন, এখন সীমিতভাবে খুব সংরক্ষিতভাবেই আমরা এগোতে চাই। আমাদের দেশের মানুষের যাতে কষ্ট না হয়, মানুষের যে চাহিদাটা সেটা যেন পূরণ করতে পারি, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা বাজেট করেছি।

[৭.২] এবারের বাজেটে মৌলিক চাহিদাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিএনপির আমলে সর্বশেষ বাজেট মাত্র ৬২ হাজার কোটি টাকার ছিলো। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়েছিলো ৬৮ হাজার কোটি টাকার, সেখানে আমরা ৭ লাখ ৯৮ হাজার কোটি টাকা বাজেট প্রস্তাব করেছি।

[৮] ছয়দফা দিবস ঐতিহাসিক ৭ জুন উপলক্ষ্যে তেজগাঁওস্থ  আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আয়োজিত এ সভায় শেখ হাসিনা বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানুষকে বঞ্চনা থেকে মুক্ত করতে চেয়েছিলেন। তাই ১৯৬৬ সালে বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফা প্রণয়ন করেছিলেন। 

[৯] প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৬ দফার সমর্থনে বঙ্গবন্ধু জেলায় জেলায় মিটিং করেছেন। যে জেলাতেই গেছেন, সেখানেই মামলা হয়েছে; তাকে কারারুদ্ধ করা হয়েছে। আবার মুক্তি পেয়েছেন। এভাবে একে একে ৮ জেলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। নবম বার গ্রেপ্তার হন ৮ মে, ৬ দফাকেন্দ্রিক শেষ জনসভার পর। পরদিন তাকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। সেবার আর তাৎক্ষণিক মুক্তি পাননি। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হলো। 

[১০] আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ১৯৬৮ সালে বঙ্গবন্ধুকে কারাগার থেকে মুক্তি দিয়ে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যাওয়া হয়। ৬ মাস পর মামলা শুরুর আগে পর্যন্ত আমরা জানতে পারিনি, তিনি কোথায় কী অবস্থায় আছেন। এভাবে নিজের জীবন বিপন্ন করে বারবার তিনি ঝুঁকি নিয়েছেন দেশের জনগণের জন্য। 

[১১] শেখ হাসিনা আরো বলেন, ১৯৬৬ সালের ৭ জুন আহুত হরতাল সফল করার জন্য সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ছিলেন আমার মা। তিনি ছিলেন গেরিলা। 

[১২] তিনি সবার চোখ এড়িয়ে ছাত্র ও শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। কর্মসূচি সফল করার পরামর্শ দিতেন। ৭ জুনের হরতালের দিন মনু মিয়াসহ ১১ জন শহীদ হলেন। বাঙালির সব অর্জনই বুকের রক্তে অর্জিত হয়েছে।